18/09, Block B, Bosila City R/A
Mohammadpur, Dhaka - 1207
+880 9638 667701
+880 1711 871722
যান্ত্রিক ঢাকার একটি সাধারণ সকাল। রিকশার ঘণ্টা আর অফিসগামী মানুষের ভীড় আরেকটা ব্যস্ততম দিনের কথা জানান দিচ্ছে। এদিকে ডেলিভারি রাইডার বাবুল তার দিন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাবুলের ব্যাগ ভর্তি অনলাইনে অর্ডার করা বিভিন্ন পণ্য, যা মিরপুর, উত্তরা, বনানী ও পুরান ঢাকার নানা ঠিকানায় পৌঁছানোর অপেক্ষায়।
কিন্তু বাবুল জানে, সে যে সব পার্সেল বহন করছে, তার সবই যে গ্রাহকের হাতে পৌঁছাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। যে সকল পার্সেল ফিরে যাবে তার কিছু পৌঁছাবে না সময়ের কারণে, আর বেশিরভাগ না পৌঁছানোর কারণ বাজে ট্রাফিক, বৈরি আবহাওয়া কিংবা পণ্যের মান নয়। কারণ গ্রাহকের দেয়া ভুল বা অসম্পূর্ণ ঠিকানা। বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে "ভুল ঠিকানা" একটি অদৃশ্য বিপদ, ব্যবসায়িরা যার গুরুত্ব হয়তো কম বোঝেন, আর গ্রাহকরাও প্রায়ই অবহেলা করেন।
ধরুন, বাবুল মিরপুর ১১-তে একটি পার্সেল দিতে পৌঁছালো। ঠিকানায় লেখা "হাউজ ১৩, রোড ৫"। সে ৫ নাম্বার রোডের মোড়ের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, এই ঠিকানা কোথায়? দোকানদার বললেন: "ভাই, এই রোডে তো দু'টা ১৩ নম্বর বাড়ি। কোনটার কাছে যাবেন?"
একই নম্বরের দুটো বাড়ি এখানে, অন্যদিকে গ্রাহকের ফোন বন্ধ। দিনের প্রায় অর্ধেক সময় শেষ আবার আজকে তার আরও ১৩টি ডেলিভারি দিতে হবে। এটি বিশেষ কোন ব্যাপার নয়, আমাদের চারপাশে প্রতিদিন শত শত রাইডারের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে।
জনবহুল ঢাকার জটিল গলি, চট্টগ্রামের এলোমেলো পাহাড়ি এলাকা কিংবা উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম, প্রতিদিনই অসংখ্য ডেলিভারি ব্যর্থ হয় শুধুমাত্র অস্পষ্ট ঠিকানার কারণে।
অনেক জায়গার স্থানীয় নাম গুগল ম্যাপে নেই। যেমন: "বড় মসজিদের পেছনের গলি" শুনতে সহজ শোনালেও ডেলিভারি দিতে গিয়ে দেখা যায় বড় মসজিদের পেছন দিকে দুটো গলি, বিপাকে পড়ে রাইডার।
নতুন রোড, নতুন বিল্ডিংয়ের ঠিকানা গুগল ম্যাপে ধীরে আপডেট হয় কিন্তু এলাকা বাড়ে দ্রুত।
অনেকেই লিখেন, "মিরপুর ৬, কেএফসির পাশের সাদা বিল্ডিংয়ের ৩ তলা" কিন্তু কেএফসির চারপাশে সাদা রঙের একাধিক বিল্ডিং থাকতে পারে।
অনেক সময় ঠিকানা অটো-ফিল হয়ে ভুল ঠিকানা হয়ে যায়।
একটি ডেলিভারি গ্রাহকের কাছে না পৌঁছানো মানে শুধু সময় নষ্ট না বরং এর ক্ষতিকর দিক ব্যবসায় বহুমুখী প্রভাব ফেলে। যেমন:
বাংলাদেশের বাজারে যেখানে ক্যাশ অন ডেলিভারি প্রধান, সেখানে একটি ব্যর্থ ডেলিভারি মানে গ্রাহক হারানোর সম্ভাবনা খুব বেশি।
এগুলো বাস্তবে কাজ করা পরীক্ষিত কৌশল, যা যেকোনো ব্যবসা অবিলম্বে ব্যবহার করতে পারে।
গ্রাহকের থেকে লিখিত ঠিকানার সাথে গুগল ম্যাপ পিন নিতে পারলে রাইডারের কাজ ৫০% সহজ হয়ে যায়।
কেন এটি কার্যকর?
Pathao, Steadfast, RedX ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
ওয়েবসাইট বা অর্ডার ফর্ম এমনভাবে তৈরি করুন যেন অসম্পূর্ণ ঠিকানা দিলে সিস্টেম নিজেই প্রশ্ন করে:
এই ইনফরমেশন পরবর্তীতে ডেলিভারি ঝামেলা কমায়।
একটি সহজ কনফার্মেশন কল বহু ব্যর্থ ডেলিভারি রোধ করতে পারে।
যে চেকলিস্ট ব্যবহার করা যায়:
বাংলাদেশে এটি ব্যবহারে ৩০-৪০% পর্যন্ত ব্যর্থতা কমে।
অনেক এলাকার সরকারি নাম একরকম কিন্তু মানুষ চেনে অন্য নামে। যেমন: "লালমাটিয়া ব্লক ডি" রোডকে স্থানীয়রা "ডাক্তার গলি" নামে চেনে। এক্ষেত্রে স্থানীয় এলাকা সম্বন্ধে জানা থাকলে রাইডারদের কাজ অনেক সহজ হতে পারে।
অর্ডার ফর্মে এসব ফিল্ড রাখুন:
এতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ যায় না।
একটি SMS যেমন: "আপনার পার্সেল ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাবে। ফোন ধরার জন্য প্রস্তুত থাকুন।" বাংলাদেশের ফুডপাণ্ডা এরকম সিস্টেম ফলো করে। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে রিটার্ন ডেলিভারি কমায়।
গ্রাহক অনেক সময় একটি নম্বর কম ব্যবহার করে, দুটি নম্বর থাকলে যোগাযোগ সহজ হয়।
বাংলাদেশে ফেক COD অর্ডার অন্যতম বড় একটা সমস্যা।
সম্ভাব্য সমাধান:
এই পদ্ধতিও রিটার্ন কমাতে সাহায্য করে।
মিরপুরে "নদী ফ্যাশন" নামে একটি ছোট বুটিকের দোকান ছিল। তাদের মাসে প্রায় ২৫% ডেলিভারি ব্যর্থ হতো, বেশিরভাগই ভুল ঠিকানা ও গ্রাহক ফোন না ধরার কারণে। সমস্যা বুঝতে পেরে সমাধানের জন্য তারা তিনটি পরিবর্তন করল:
মাত্র দুই মাসে তাদের ব্যর্থতা ২৫% থেকে ৮%-এ নেমে আসে। ফলে ব্যবসায় গ্রোথ আসাও শুরু হল, গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ল, আর রাইডারের চাপও কমলো।
বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশনের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা পাবো:
তখন ভুল ঠিকানা সমস্যাও অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশে ভুল ঠিকানা যেমন প্রযুক্তিগত সমস্যা, তেমনি আচরণগত সমস্যাও বটে। কিন্তু সঠিক কৌশল, উন্নত যোগাযোগ, আর আধুনিক টুলস ব্যবহার করলে ডেলিভারি ব্যর্থতা অনেক কমানো সম্ভব।
মনে রাখবেন, "প্রতিটি সফল ডেলিভারি যেমন গ্রাহকের আস্থা বাড়ায়, তেমনি প্রতিটি ব্যর্থ ডেলিভারি গ্রাহক নষ্ট করে"।
ব্যবসার লক্ষ্য হওয়া উচিত নির্ভুলতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি।