রিটার্ন রেট কমানোর স্মার্ট কৌশল: পণ্য, কনটেন্ট ও লজিস্টিক্স অপ্টিমাইজেশনের সমন্বিত প্রয়োগ

বর্তমান বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসায় রিটার্ন হার কমানো এখন শুধু একটি অপারেশনাল উন্নয়ন নয় বরং এটি একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক কৌশল। পণ্যের ভুল মাপ,অবাস্তব তথ্য, ছবির সাথে পণ্যের অমিল, দেরিতে সরবরাহসহ নানা কারণে রিটার্ন হার দ্রুত বাড়ে, যা সরাসরি আপনার লাভ, গ্রাহক, ভরসা ও ব্র্যান্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই লেখায় একজন উদ্যোক্তার বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখানো হয়েছে কীভাবে পণ্যের মান উন্নয়ন, সঠিক কনটেন্টের ব্যবহার , উন্নত সরবরাহ ব্যবস্থা ও বাস্তব তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত একটি ব্যবসার রিটার্ন হার ৩০% থেকে ১২% -এ নামিয়ে এনেছে।

গল্পের শুরু: “অর্ডার বাড়ছে কিন্তু লাভ কোথায় ” রিফাতের চিন্তা

রিফাত, ঢাকার এক তরুণ ই-কমার্স ব্যবসায়ী। প্রতিনিয়তই তার দোকানে অর্ডার রেট বাড়ছে ,নতুন গ্রাহক আসছে । আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সব ঠিকঠাক চলছে কিন্তু দিন শেষে হিসেব মিলাতে গিয়ে সে বুঝতে পারে কেবল অর্ডারই বাড়ছে ,লাভ আর বাড়ছে না ।

কিন্তু কেন ?

রিফাত ভাবে “আমি তো সারা দিন পরিশ্রম করছি ,তাহলে আমার লাভ যাচ্ছে কোথায়?”

রিফাত হিসেব করে দেখলো রিটার্ন হার প্রায় ৩০% অর্থাৎ প্রতি ১০টি পণ্যের মধ্যে ৩টিই ফিরে আসছে এবং সে প্রথমে এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয় ।

অধ্যায় ১: রিটার্নের আসল কারণ যা রিফাতের চোখ খুলে দিল

একদিন রিফাত সব রিটার্ন হওয়া প্যাকেট এনে টেবিলে রাখে এবং কারণ খোঁজার চেষ্টা করে যে কেন এত পার্সেল রিটার্ন আসে । সে গ্রাহকের মন্তব্য এনালাইজ করে পায় -

  • পণ্যের রঙ ছবির মতো নয়
  • পরিমাপে ভুল বা সাইজে ভুল
  • পণ্যের অভ্যন্তরীণ ত্রুটি
  • দুর্বল প্যাকেজিং
  • দেরিতে ডেলিভারি পাওয়া
  • প্রত্যাশার সাথে বাস্তবের সাথে মিল নেই সহ অনেক অভিযোগ

রিফাত বুঝতে পারে এটা একটা সমস্যা না বরং পণ্য সংগ্রহ ,কনটেন্ট ও সরবরাহ পুরো প্রক্রিয়াকরণ যাত্রার দুর্বলতার প্রতিফলন।

রিফাত সমস্যার সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় একটি স্মার্ট ই-কমার্স পরিচালনা ব্যবস্থা ব্যবহার করার, যা পণ্য যাচাই, কনটেন্টের মান উন্নয়ন, ডেলিভারি নিয়ন্ত্রণ এবং রিটার্ন সব এক জায়গা থেকে পরিচালনা করতে পারে।

অধ্যায় ২: পণ্যের মান উন্নয়ন - রিফাতের প্রথম জয়ের পর্ব

ই-কমার্স পরিচালনা সিস্টেমের এনালাইজেশন দেখায় কোন পণ্য সবচেয়ে বেশি রিটার্ন হয়, কোন সরবরাহকারীর পণ্যে সমস্যা বেশি থাকে, কোন মাপ বেশি ঝামেলা তৈরি করে ।

স্বয়ংক্রিয় পণ্য যাচাই (QC)

রিফাত দেখলো আগে ম্যানুয়ালি পণ্য খুঁজে বের করতে গিয়ে বেশি সময় লাগতো এবং পদে পদে ভুল হওয়াটাও ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এখন সিস্টেম নিজেই ব্যাচ অনুযায়ী পণ্য যাচাই করে তালিকা তৈরি করছে।

ফলে ত্রুটিযুক্ত পণ্যের সংখ্যা ৪০% কমে যায় এবং ভুল পণ্য পাঠানোরও ভয় থাকে না।

তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তে পরিমাপ সমস্যার সমাধান

সিস্টেম এনালাইজেশন দেখায় “মাঝারি (Medium) মাপের পণ্যের রিটার্ন হার সবচেয়ে বেশি।”

রিফাত অবাক হল তবে সমাধান এর জন্য পণ্যের সাথে -

  • উচ্চতা ও গাঠনিক মাপ অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড তালিকা তৈরি করলো
  • মডেলের উচ্চতা ও পরিহিত পণ্যের মাপ উল্লেখ করলো

ফলে মাপ-সংক্রান্ত রিটার্ন রেট প্রায় ৪৫% কমে গেল।

অধ্যায় ৩: কনটেন্ট

একজন গ্রাহক রিভিউ লিখেছে “ পণ্য উল্লেখিত ছবির মতো না ”

কথাটি রিফাতের নজরে পড়ে । সে বুঝতে পারে যেসব পণ্যের ছবি দুর্বল, সেগুলোই বেশি রিটার্ন আসে । তাই সে মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করা শুরু করে সাথে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখে । যেমন -

  • প্রাকৃতিক আলোয় ছবি তোলা
  • পণ্যের চারদিক থেকে (৩৬০°) ছবি তোলা
  • পণ্যের রঙ যেন বাস্তবের মতো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা
  • ক্লোজআপ শট নেয়া যাতে পণ্যের মান ফুটে উঠে

তারপর সিস্টেমের কনটেন্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী পণ্যের বর্ণনা ,উপাদান, গুণ, ব্যবহার, রঙ, মাপ সব স্পষ্ট করে উল্লেখ্য করা শুরু করে ।

ফলাফল এনালাইজ করে দেখল “পণ্য ছবির মতো না” এই অভিযোগ ৭০% কমে গেছে ।

ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি - যা নীরবে রিফাতের বিক্রি বাড়িয়ে দিল

সিস্টেমের এআই এনালাইজ করে পরামর্শ দেয় রিচ বাড়াতে ভিডিও যোগ করুন । রিফাত ভিডিও বানানো শুরু করে । ভিডিওতে বিস্তারিতভাবে পণ্যের কোয়লিটি কেমন, রঙ কেমন, ব্যবহারবিধি, সাইড ইফেক্ট ,কোয়ান্টিটি সহ একজন গ্রাহকের মনে যা প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলোর উত্তর দেয় ।

ফলে গ্রাহকের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা আলাদা হওয়ার চান্স কমে যায় এবং রিটার্ন রেট আরও কমে যায় ।

অধ্যায় ৪: সরবরাহ ব্যবস্থা -শেষ ধাপ, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

রিফাত এবার দেখে রিটার্ন আসার আরেকটা বড় কারণ হল সরবরাহ ব্যবস্থার ভুল ।

যেমন • দেরিতে পৌঁছে • ক্ষতিগ্রস্ত হয় • ঠিকানা ভুল পাওয়া যায় ।

এবারেও স্মার্ট সিস্টেম তাকে সাহায্য করে :

  • গ্রাহকের ঠিকানা যাচাই করতে
  • ডেলিভারির আগে স্বয়ংক্রিয় ফোনকল প্রদান করতে
  • যানবাহন /সরবরাহকারীকে নির্দেশনা দিতে
  • পণ্যের রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং করতে এবং প্যাকেজিং উন্নত করতে

এটার ফলে ডেলিভারি ত্রুটি রিটার্ন ৬০% কমে যায় , পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ট্র্যাকিং করার ফলে ডেলিভারির সময় সম্পর্কে গ্রাহকের পূর্ণ ধারণা থাকে বলে দেরি হওয়ার সুযোগ থাকেনা ।

অধ্যায় ৫: বাস্তব তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং রিফাতের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট

আগে রিফাত অনুমান করে সমস্যা সম্পর্কে ধারণা করত এবং ম্যানুয়ালি সেটাকে সমাধানের চেষ্টা করতো । এখন সিস্টেমের সাহায্যে বাস্তবিক তথ্য দেখে । জানতে পারে

  • কোন পণ্য সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এবং এর কারণ কি
  • কোন মাপ সমস্যাযুক্ত
  • কোন ডেলিভারি ম্যানের জন্য গ্রাহক পণ্য দেরিতে পেয়েছে
  • কোন ডেলিভারি কর্মী কতোগুলো ডেলিভারি দিয়েছে
  • কোন গ্রাহক বারবার অর্ডার দিচ্ছে আবার কেই বা ক্যান্সেল করছে
  • কোন এলাকার রিটার্ন হার বেশি
  • কোন লোকেশনে গ্রাহক বেশি

সিস্টেমের বাস্তবসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে রিফাত পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করে ফলে ৩ মাসে তার রিটার্ন হার নেমে ১২% -এ চলে আসে ।

শেষ অধ্যায়: রিফাত এখন স্থিতিশীল ও বড় হওয়ার জন্য প্রস্তুত

রিফাতের ব্যবসায় এখন

  • রিটার্ন কম
  • লাভ বেশি
  • ব্র্যান্ডের উপর গ্রাহকের বিশ্বাস
  • মসৃণ পরিচালনা ব্যবস্থা আছে

অর্থাৎ তার ব্যবসার গতিশীল এবং দ্রুত প্রশস্ত হওয়ার দিকে আগাচ্ছে ।

সে বুঝতে পারে “রিটার্ন ক্ষতি কমালে ,এটি ব্যবসার ভবিষ্যৎ বদলে দেয়”

আপনার ই-কমার্সও রিফাতের মতো বদলে যেতে পারে যদি আপনি পণ্যের মান উন্নত করার পাশাপাশি কনটেন্ট বাস্তব ও স্পষ্ট রাখা , সরবরাহ শক্তিশালী করা এবং DevzCart-এর মতো একটি স্মার্ট, ম্যানেজড ই-কমার্স ব্যবস্থা ব্যবহার করেন ।

তাহলে রিটার্ন হার ৩০% হোক বা ৫০% , কমানো সম্ভবই নয় বরং খুবই সহজ যদি আপনার থাকে DevzCart-র মতো স্মার্ট ই-কমার্স সল্যুশন ।

Share: