গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিক্রির সাথে সাথে একটি সমস্যাও দ্রুত বড় হয়েছে: ফেইক অর্ডার আর COD ফ্রড।
অনেক সেলার মাসের শেষে হিসাব করতে গিয়ে দেখেন—অর্ডার এসেছে অনেক, কিন্তু ডেলিভারি সাকসেস হাতে গোনা। আর প্রফিট? প্রায় নেই বললেই চলে।
ফলাফল:
- মার্কেটিং খরচ পানিতে যায়
- RTO (Return To Origin) ও কুরিয়ার চার্জ আকাশছোঁয়া
- অপারেশন টিম demotivated হয়ে পড়ে
- সত্যিকারের কাস্টমারের কাছেও ব্র্যান্ড ইমেজ খারাপ হয়
অনেক ই-কমার্স তাই একটি কমন পদ্ধতিতে ভরসা করে: কুরিয়ারের কাস্টমার স্ট্যাটিসটিক্স দেখে সাক্সেস রেট অনুমান করা। মানে, নাম্বার দিয়ে আগে সফল ডেলিভারি হলে ধরে নেওয়া হয়—“কাস্টমার ভালো”।
কিন্তু এই এক লেয়ারের সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক সময় পুরোপুরি ফেইল করে এবং এর ফলাফল ভয়ংকর হতে পারে।
এই লেখায় আমরা দেখব:
- শুধু কুরিয়ার স্ট্যাটিসটিক্সই কেন যথেষ্ট নয়
- কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড আপনার লয়াল কাস্টমারের নম্বর ব্যবহার করে হ্যারাস করতে পারে
- কেন OTP ভেরিফিকেশন, অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েশন ও পারশিয়াল পেমেন্ট এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- DevzCart কীভাবে AI দিয়ে কাস্টমারকে বিরক্ত না করে ফেইক অর্ডার কমায়
- একটি প্র্যাকটিকাল, মাল্টি-লেয়ার্ড অ্যান্টি-ফ্রড সিস্টেম কীভাবে আপনার ই-কমার্সে বসাতে পারেন
বাংলাদেশের ই-কমার্সে “ফেইক অর্ডার” মানে কী?
বাংলাদেশি রিয়ালিটির ভিত্তিতে ফেইক অর্ডার সাধারণত ৪ ধরনের হয়ে থাকে:
১) মজা / ফান অর্ডার
- অন্যের নাম্বার/এড্রেস দিয়ে অর্ডার দেয়
- ডেলিভারির সময় ফোন ধরে না
- বা বলে: “আমি তো কিছু অর্ডার করিনি”
২) কমপেটিটর হ্যারাসমেন্ট
- প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড ইচ্ছাকৃতভাবে ডজন ডজন ফেইক অর্ডার দেয়
- আপনার RTO বাড়ে
- কুরিয়ারের চোখে আপনি খারাপ সেলার হয়ে যান
৩) নন সিরিয়াস COD কাস্টমার
- হুট করে অর্ডার দেয়
- পরে ফোন ধরে না / মুড চেঞ্জ হয়
- ফলে অর্ডার ক্যান্সেল
৪) অর্গানাইজড ফ্রড
- কুপন, ডিসকাউন্ট, ফ্রি শিপিং এক্সপ্লয়েট করতে একাধিক ফেইক অর্ডার দেয়
- একই ব্যক্তি বহু নাম্বার/এড্রেস/ডিভাইস ব্যবহার করে
এগুলোর সম্মিলিত প্রভাব:
- কনফার্মেশন কলে অতিরিক্ত খরচ
- ডেলিভারি চার্জ + RTO লস
- প্রফিট মারাত্মকভাবে কমে যায়
তাই কুরিয়ার-হিস্টোরি চেক ভালো হলেও, এটি কখনোই চূড়ান্ত সমাধান নয়।
কেন শুধু কুরিয়ার স্ট্যাটিসটিক্সে ভরসা করা বিপদজনক?
অনেক ই-কমার্স এখনো ভাবে:
“নম্বরের ডেলিভারি হিস্টোরি ভালো? → কাস্টমার অথেনটিক → অর্ডার কনফার্ম।”
কিন্তু এখানে রয়েছে ভয়ংকর একটি লুপ।
কমপেটিটর হ্যারাসমেন্ট সিনারিও
ধরুন—Customer A খুবই লয়াল শপার।
- সবসময় অর্ডার রিসিভ করে
- কুরিয়ারে তার হিস্টোরি নিখুঁত
এখন আপনার কমপিটিটর Customer A-এর নম্বর জেনে নিয়ে ওই নম্বর দিয়ে শত শত ফেইক অর্ডার দিচ্ছে।
আপনার সিস্টেম দেখছে:
- ডেলিভারি হিস্টোরি চমৎকার
- রিস্ক স্কোর লো
- গ্রিন সিগন্যাল
ফলাফল?
- আপনি সব অর্ডার প্রসেস করছেন
- Customer A শত শত কনফার্মেশন কল পাচ্ছে
- সে বিরক্ত এবং ব্র্যান্ডের ওপর রাগান্বিত
অর্থাৎ—আপনি টাকা হারালেন + লয়াল কাস্টমারও হারালেন।
তাই কুরিয়ার স্ট্যাটিসটিক্স কখনোই একমাত্র সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়।
ধাপ ১: OTP-ভিত্তিক ফোন নম্বর ভেরিফিকেশন
বাংলাদেশে ফেইক অর্ডার কমানোর সবচেয়ে সহজ ও প্রমাণিত পদ্ধতি হলো OTP ভেরিফিকেশন।
OTP যেভাবে সাহায্য করে:
- নম্বরের আসল মালিক নিশ্চিত হয়
- কমপেটিটর আর অন্য কারো নম্বর দিয়ে অর্ডার দিতে পারে না
- ফান/মজা অর্ডার কমে যায়
- ভেরিফাইড কাস্টমার ডাটাবেস তৈরি হয়
কোথায় কোথায় OTP ব্যবহার করবেন?
- প্রথম অর্ডার
- নতুন ডিভাইস
- নতুন এড্রেস
- হাই অর্ডার ভ্যালু
- রিস্কি লোকেশন
এভাবে স্মার্টলি ব্যবহার করলে—বিশ্বাসযোগ্য কাস্টমারের জন্য অভিজ্ঞতা থাকে স্মুথ, আর রিস্কি অর্ডারের জন্য সিকিউরিটি থাকে শক্ত।
ধাপ ২: অর্ডারের আগে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েশন
অনেকে মনে করেন—“অ্যাকাউন্ট খুলতে বললে কাস্টমার কমে যাবে।” বাস্তবে একটি মোবাইল-ফাস্ট, সিম্পল অ্যাকাউন্ট সিস্টেম ফেইক অর্ডার কমায় এবং বিশ্বাস বাড়ায়।
অ্যাকাউন্ট বেইজড অর্ডারের সুবিধা:
- কাস্টমার বেশি কমিটেড থাকে
- ডাটা ক্লিন হয়
- ফ্রড প্যাটার্ন দেখা সহজ হয়
- একাধিক নম্বর/এড্রেস ট্র্যাক করা যায়
প্র্যাকটিকাল সাজেশন:
- শুধু মোবাইল নম্বর + OTP দিয়ে অ্যাকাউন্ট ওপেন
- প্রথম অর্ডারের নাম/এড্রেস দিয়ে অটো-ফিল
- “Save Address” ফিচার রাখুন
ধাপ ৩: পারশিয়াল পেমেন্ট (Smart COD)
বাংলাদেশে COD খুব জনপ্রিয়, তাই বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পারশিয়াল পেমেন্ট ফেইক অর্ডার কমাতে অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর।
পারশিয়াল পেমেন্টের প্রভাব:
- নন সিরিয়াস কাস্টমার ফিল্টার হয়
- RTO কমে
- সেলার-কাস্টমার উভয়ের দায়িত্ব তৈরি হয়
সব অর্ডারে নয়—শুধু রিস্কি অর্ডারে অগ্রিম নিলেই এটি হয় স্মার্ট কনভার্শন-ফ্রেন্ডলি।
DevzCart এর AI-বেইজড ফ্রড প্রিভেনশন
DevzCart ব্যবহার করে মাল্টি লেয়ার সিস্টেম:
- OTP ভেরিফিকেশন
- অ্যাকাউন্ট বেইজড অর্ডার
- রিস্কি অর্ডারে পারশিয়াল পেমেন্ট + AI স্কোরিং
১. AI বেইজড রিস্ক স্কোরিং কী দেখে?
- কাস্টমার নতুন নাকি পুরনো
- অর্ডার ভ্যালু
- ডেলিভারি এরিয়া হিস্টোরি
- অর্ডারের সময়
- আগের ক্যান্সেল/RTO
- ডিভাইস/IP প্যাটার্ন
তারপর সিদ্ধান্ত নেয়:
- Low Risk: OTP + পারশিয়াল পেমেন্ট
- Medium Risk: OTP
- High Risk: OTP + পারশিয়াল পেমেন্ট + ম্যানুয়াল রিভিউ
২. লয়াল কাস্টমারের জন্য কম friction
একই কাস্টমারকে বারবার OTP বা পেমেন্ট চাইতে হয় না—একটি স্মার্ট ট্রাস্ট লেভেল তৈরি হয়।
অ্যাডমিনদের মানসিক বাধা: “কাস্টমার বিরক্ত হবে”
অনেকে ভয় পান: “OTP দিলে অর্ডার কমে যাবে।”
কিন্তু বাস্তবতা:
- ফেইক অর্ডার কন্ট্রোল করতে না পারলে ৬ মাসেই ব্র্যান্ড ও ক্যাশফ্লো নষ্ট হয়ে যাবে
- আজ ২টা অর্ডার কম হওয়া = সমস্যা নয়
- লং-টার্ম স্থায়ী প্রফিটই বেশি গুরুত্বপূর্ণ
- আজকের কাস্টমার নিরাপত্তা চায়—OTP সব ডিজিটাল সার্ভিসেই নরমাল
প্র্যাকটিকাল ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান
- নিজের সমস্যা খুঁজে বের করুন (মোট অর্ডার, ক্যান্সেল রেট, RTO, ফেইক অর্ডার রেট)
- চেকআউটে OTP চালু করুন
- মোবাইল-ফাস্ট অ্যাকাউন্ট সিস্টেম
- রিস্কি অর্ডারে পারশিয়াল পেমেন্ট
- রুলস-বেইজড থেকে AI-বেইজড সিস্টেমে আপগ্রেড
শেষ কথা
মার্কেট সেফ করতে আমাদের কেবল একটু বদলাতে হবে—হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
ফেইক অর্ডার ব্যবসার অংশ নয়, এটি প্রফিট, সময়, ব্র্যান্ড সবকিছু নষ্ট করে।
আপনার ই-কমার্সের জন্য প্রয়োজন:
- OTP ভেরিফিকেশন
- অ্যাকাউন্ট বেইজড অর্ডার
- রিস্কি অর্ডারে পারশিয়াল পেমেন্ট
- স্মার্ট AI-বেইজড রিস্ক স্কোরিং
DevzCart কাজ করছে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করতে— যেখানে সেলার সিকিউর, কাস্টমার সিকিউর, আর পুরো মার্কেট আরও সেইফ ও মেচিউর হয়ে ওঠে।